জলপরী যখন আদুরে বউ পর্ব ১
""প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা অনেক পুরাতন দিঘী আছে,, কোন এক জমিদার প্রায় ৮০০ বছর আগে দিঘীটি কাটে,, জমিদারের মেয়ের নাম ছিলো মেঘ,, তার মেয়ের নাম করনে দিঘীর নাম হয় মেঘডুবি,,
এই মেঘডুবি দিঘীটি নিয়ে লোকমুখে অনেক গল্প,, কাহিনি শোনা যায়,,
তবে আজ পর্যন্ত এ দিঘীর দ্বারা কোনো মানুষের ক্ষতি হয়নি,,
তবে এখানে গভীর রাতে নাকি পরীরা আসে গোসল করতে,,
তখন কেউ কেউ এসব পরীর গোসল দেখতো,,ওদের গান শুনতো নাচ দেখতো,,,
তবে কোন একদিন রাতে এই দিঘীতে পরীরা আসছিলো,,, তখন ইকবাল ডাকাত নামের একটা ডাকাত ও তার বাহিনী নিয়ে সেই পড়ীদের উপরে আক্রমণ করে,,
এতে করে পড়ীরা ভয় পেয়ে যায়,, আর কোনদিন পড়ীরা নাকি ফিরে আসে নি,,
ইকবাল ডাকাত ও পরে একদিন র*ক্ত বমি সহ ওই দিঘীর পাড়ে মৃ*ত পরে ছিলো,,
তারপর থেকে কেউ ভয়ে এই দিঘীতে যায় নি,,
শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে গেলো হৃদয়,আহমেদ শিশির,, সুন্দর দেহ,, ফর্সা গায়ের রং আর চোখ গুলোও নীল,,
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে শিশীর,,, পড়াশুনা, খেলাধুলা আর গান বাজনায় পারদর্শী শিশীর,,
ইন্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়াতে,,, গ্রামে মামা কল দিয়ে বললো বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য,,
শ
শহরের কোলাহল,, দূষিত বাতাস,, এসব থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার জন্য শিশীর ও রাজি হয়ে গেলো,,
রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো,, ট্রাভেলিং টু মেঘডুবি,,
এর পর গাড়ী নিয়ে ড্রাইভার এর পাশের ছিটে বসে রওনা দিলো শিশীর
ড্রাইভার আর শিশীরের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো,, তাই ওরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করতে করতে চললো,,,
শিশীর খুব ভালো বাসি বাজাতে পারে,, এছাড়াও গিটার,, বেহালা আর গান গাওয়াতেও ও খুব পারদর্শী,,
শিশীর অবসর সময়ে একা একা বসে বাসি বাজায়,,
ভোর রাতের কিছু সময় আগে ওরা পৌঁছে গেলো,,, তবে রাস্তা টা কিছু কাদা হওয়ায় গাড়ি আর সামনে যেতে পারবে না,,
শিশীর অনেক দিন পর এখানে আসাতে,, রাস্তাঘাট কিছুই চিনলো না অন্ধকারে,,
ড্রাইভার গাড়ী ফেরত নিয়ে চলে যাবে ঢাকাতে,, তাই ও বললো কাদায় গাড়ির চাকা নষ্ট না করে,, গাড়ীটি নিয়ে ফিরে যেতে,,
ড্রাইভার ওর কথা মতো গাড়ী নিয়ে ফিরে চলে গেলো,,
এখন সমস্যা হলো এই অন্ধকারে কাদা যুক্ত রাস্তায় বাকি পথটুকু কিভাবে চলে যাবে মামার বাড়িতে,,
এসব ভাবতে ভাবতে ওর মামা রতন গাজীর নাম্বারে কল দিলো,,
কয়েকবার কল দিলো,, কিন্তু ঘুমের যন্ত্রণায় কেউ কল ধরলো না,,
শিশীর একাই হাটা শুরু করলো মামার বাড়ির উদ্দেশ্য,,
ওর মামা বাড়িতে যেতে হলে সেই মেঘডুবি দিঘীটা পার হয়ে যেতে হয়,,,
পূর্নিমার রাতের আলোয় আজ দিঘীটা খুব সুন্দর লাগতেছে,,
শিশীর হাটতেছে দিঘীর পাশ দিয়ে আর সৌন্দর্য উপভোগ করতেছে,,
এমন সময় ওর চোখে পরলো দিঘীর থেকে একটা মেয়ে কলসি কাখে করে আসতেছে,,
শিশীর মনে মনে ভাবলো,, এতো রাতে কলসি কাখে মেয়ে মানুষ দিঘীতে কি করে?
তাই ও একটু আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলো,,
মেয়েটি ওর কাছে আসতেই শিশীর ডাক দিলো,, এইযে শুনছেন?
মেয়েটির চেহারা রাতের অন্ধকারেও হীরার মতো চকচক করতেছে,,,
শিশীর কোনদিন এর আগে এতো সুন্দর রমনী দেখেনি,, মেয়েটি বললো,, কিছু বলবেন?
মেয়েটির সৌন্দর্য দেখে ও অবাক,, তারপর আমতা আমতা করে বললো,, রতন গাজীর বাড়িটা কতদুর বলতে পারবেন?
মেয়েটি বললো,, আপনাকে তো এই গ্রামে এর আগে কোনদিন দেখিনি,,
আপনি রতন গাজীর কি হোন?
ও বললো আমি রতন গাজীর ভাগিনা হই,, আমার নাম হৃদয় আহমেদ শিশির ,
আপনি কে,, ?
মেয়েটি বললো আমার নাম রোদমিলা,, এই গ্রামেই আমার বাড়ি,, আপনি শহরে থাকেন তাই আপনাকে চিনিনা,,
শিশীর বললো,,আপনি কি আমাকে একটু রতন গাজীর বাড়িটা দেখিয়ে দিতে পারবেন?
রোদমিলা বললো,, চলুন
শিশীর আর রোদমিলা হাটতেছে,,
গায়ের মেয়ে এতো সুন্দরী,, অন্ধকারেও গায়ের ফর্সা রং টা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে,, পায়ে আলতা পরা,, নাকে নোলক,, চুলগুলো ঘনকালো,, মুক্তঝরা হাসি দেখেই শিশির ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলো,,
শিশীরকে ওই মেয়ে এই কথা সেই কথ জিজ্ঞেস করলো,, শিশীর শুধু উত্তর দিলো আর মেয়েটির সৌন্দর্য উপভোগ করলো,,
দিঘীটা পার হয়ে যাওয়ার পরেই,, মেয়টি বললো আমি আর যেতে পারবো না,, এইটুকু আমার শেষ,,
ওইযে ওই বাড়িটা দেখতেছন,, ওটাই রতন গাজীর বাড়ি,,
শিশীর ধন্যবাদ দিলো,, মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো,,
শিশীর বাড়িতে পৌঁছাতে ফজরের আজান দিলো,, ওর মামা নামাজ পরতে উঠে দেখলো উঠানে শিশীর এসে হাজির,,
সবাইকে ওর মামা ডেকে,, উঠালো,, সবাই অনেক খুশি হলো,,
তারপর শিশীর একটু নাস্তা করে,, বিশ্রাম নিতে চলে গেলো,,
শিশীর শুধু রোদমিলার কথাই ভাবতে লাগলো,,
এতো সুন্দর গায়ের মেয়ে হতে পারে,, সেটা ও কোনদিন ভাবে নি,,
সকাল ১১ টার দিকে ওর মামাতো ভাই পলক কে নিয়ে গ্রামটা ঘুরতে বেরোলো,,,
দিঘির কাছে যেতেই ওর রোদমিলার কথা মনে পরলো,,
পলককে জিগ্যেস করলো,, রোদমিলাদের বাড়ি কোনদিকে?
পলক বললো এই নামের কোন মেয়ে এই গ্রামে নেই আর এই নাম ও কোনদিন শোনেও নি,,
পলককে গলকাল রাতের ঘটনা সব খুলে বললো,,,
পলক এর বয়স কম,, তাই ওর মাথায় এসব কিছুই ঢুকলো না,,
শিশীর বিকেলে একা একা গ্রাম টা দেখতে বেরুলো,, ওর উদ্দেশ্য রোদমিলার বাড়িটা খুজে বের করা,,,
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও যখন রোদমিলার বাড়িটা খুজে বের করতে পারলো না,,
আর সবাই যখন বললো,,এই গ্রামো রোদমিলা নামের কোনো মেয়ে নেই,, তখন ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো,,
ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলো না,, এই গ্রামে রোদমিলা থাকে না,,
রাতে যখন সবাই শুয়ে পরলো,, শিশীর চুপি চুপি বাঁশি নিয়ে চলে গেলো দিঘীর পারে,,
বসে বসে একাকী বাশিটা বাজাতে লাগলো,,,
তারপর ও কিছুক্ষন পরে নুপুরের আওয়াজ শুনলো,,
পিছনে তাকিয়ে দেখে রোদমিলা আসতেছে,,
আজ ওর সংগে আরো কয়েকটা মেয়ে,,,
সবাই খুব সুন্দরী,,, ওরা আজকে নুপুর পরে আসছে,,
রোদমিলাকে দেখে শিশীর অনেক খুশি হলো,,
রোদমিলা হাসি দিয়ে বললো,, আপনি তো খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারেন,,
আপনার বাশির সুর শুনে আমরা বান্ধবীরা ছুটে চলে আসছি,,
শিশীর বললো,, তোমার বাড়িটা সারাদিন খুজেছি,, কিন্তু কেউ তো তোমাকে চিলনো না,, আর তোমার নাম ও কেউ জানে না,,
রোদমিলা হাসি দিয়ে বললো,,
আপনি রোজ রাতে এই সময়ে এখানে আসবেন,, আমি আপনার সংগে এখানে দেখা করবো,,
তবে সাবধান,, যদি কেউ জানে আপনি আমার সংগে কথা বলেন আর দেখা করতে আসেন,, তাহলে আমার খুব সমস্যা হবে,, আর কোনদিন আমার দেখা পাবেন না
শিশীর ওর কথায় রাজি হয়ে গেলো,,,
রোদমিলা বললো,, আমার বান্ধবী আপনার বাশির সুর শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছে,,
ওদের একটু বাঁশির সুর শোনান,, ওরা নাচবে
শিশীর ওর কথা শুনে খুশি হলো,,
তারপর বাশি বাজানো শুরু করলো,, আর ওর বান্ধবীরা নাচা শুরু করলো,,
শিশীর এড সুন্দর নাচ এর আগে কোনদিন দেখেনি,,
সবাই সুন্দরী,, সবার শরীর থেকে আতরের ঘ্রান আসতেছে,,
ওরা শিশীরের বাশির সুর শুনে মনের আনন্দে নাচতে লাগলো,,,
রোদমিলা ও শিশীরের বাশির সুর শুনে মুগ্ধ হলো,,,
কিছুক্ষন নাচা নাচী করার পর,, শিশীর বললো,,,
তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?
রোদমিলা বললো,, আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন,,
মেয়েটা এতো মায়াবী,,
শিশীর আর রোদমিলা অনেকক্ষন গল্প করলো,, রোদমিলা ওর কাপরের আচল থেকে বাদাম,, কিসমিস,, বের করে দিলো,,
কাজু,, পেস্তা,, ওয়ালনাট বাদাম দিলো শিশীরের হাতে,,
আর বড় বড় গোলাপি আঙুরের কিসমিস দিলো,,
শহরেও এই কিসমিস গুলো পাওয়া যায়না,, ও গ্রামের মেয়ে হয়ে এতগুলো কোথায় পেলো,,
একটু একটু করে খাচ্ছে শিশীর আর এত স্বাদ,, সেটা উপভোগ করতেছে,,
রোদমিলার বান্ধবীরা চলে গেলো,, ওরা খুব গম্ভীর আর কম কথা বলে,,
রোদমিলা শিশীরের পাশে বসে গল্প করতে লাগলো,,,
শিশীর বিবাহিত কিনা,, পরিবারে কে কে আছে,, এখানে কতদিন থাকবে,,
এসব জিজ্ঞেস করলো,,
শিশীর সবকিছু বললো,, তারপর বললো এখানে বেড়াতে এসেছে,, কিছুদিন পরে চলে যাবে,,
একথা শুনে রোদমিলার মন খারাপ হয়ে গেলো,,
শিশীর বুঝলো ওর মন খারাপ হয়ে গেছে,, তাই বললো তোমার মতো সুন্দরী রমনী যদি পাই,, তাহলে নয়তো এই গ্রামেই থেকে যাবো,,
রোদমিলা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,, সত্যি কও তাই?
শিশীর বললো,, জ্বি,,
তারপর ওরা হাসিঠাট্টা করতে লাগলো,,
একটু পরে ফজরের আজান দেওয়ার সময় হইছে,,
রোদমিলা বললো এখন আমাকে যেতে হবে,, কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে,,
শিশীর বললো,, আবার কখন আসবে?
ও বললো প্রতিদিন একই সময়ে আসবো,,,
তবে তোমাকে মনে করিয়ে দেই,, কেউ যেনো আমাদের সম্পর্কে না জানতে পারে,,
তাহলে আর কোনদিন কিন্তু আমার দেখা পাবে না,,,
শিশীর বললো,, ঠিক আছে কেউ জানবে না,,
রোদমিলার চলে যাওয়ার দিকে শিশীর চেয়ে রইলো,, কিছুদুর যাওয়ার পরে অন্ধকারে রোদমিলা মিশে গেলো,,
শিশীর ও ওর মামার বাড়িতে এসে চুপি চুপি দরজা খুলে,,ঘরে ঢুকে শুয়ে পরলো,,,