হবু শালি যখন বউ পর্ব ২
হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা ভীষণ কাঁপছে।উপরে তাকালাম মনে হচ্ছে ফ্যান আমার উপরে পড়ে যাবে।সবকিছু উল্টা উল্টা লাগছে।আমার এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছি না।তাই একদম চোখটা বন্ধ করে ধপাস করে শুয়ে পড়ি।
আস্তে আস্তে শরীরটা আরও নিস্তেজ হয়ে কাঁপতে লাগল।কষ্ট হতে লাগল খুব।হঠাৎ খেয়াল করলাম কেউ একজন আমার হাতটা ধরেছে।হাতটা ধরে চোখ মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে।কিন্তু চোখ খুলার মত শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না।এবার মনে হচ্ছে কেউ আমার প্রেসার মাপছে।তবুও চোখ খুলে দেখার মত শক্তি পাচ্ছিলাম না।আস্তে আস্তে আরও নিস্তেজ হতে লাগলাম।অণুভব করলাম এখন আর আমার পাশে কেউ নেই।খুব অসহায় মনে হতে লাগল নিজেকে।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম কেউ আমার মুখে কিছু একটা দিয়ে বলতেছে
-এই যে আপনি এটা খেয়ে নিন।আপনার প্রেসার খুব নেমে গিয়েছে।একটু কষ্ট করে খান। হা করুন।
কথাগুলো শুনার পরও আমি হা করার শক্তি পাচ্ছিলাম না।কোনভাবে নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করে হা করলাম।খেয়াল করলাম মুখে পানি দিচ্ছে।পানিটা মিষ্টি।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা চিনির পানি।তাই নিজের মধ্যে শক্তি জুগিয়ে পানিটা কষ্ট করে খেলাম।খাওয়ার পর একটু ঝিম ধরে শুয়ে রইলাম।আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে শরীরে শক্তি পাচ্ছি।চোখটা খুলার মত শক্তি পাচ্ছি।কোনরকমে চোখ খুললাম।চোখ খুলার পর খেয়াল করলাম অরন্য আমার পাশে বসে আছে।সাথে কিছু খাবার নিয়ে।আমি একটু তারাহুরা করে বসতে নিলাম।উনি আমাকে বলল
-এত তারাহুরা করার কিছু হয় নি।আপনি আস্তে আস্তে উঠুন।আর উঠে এগুলো খেয়ে নিন।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সকাল থেকে কিছু খান নি।তাই প্রেসার কমে গিয়েছিল।আপনি একটু এগুলো খেয়ে নিন।
উনার কথা শুনে মনে মনে বলতে লাগলাম।সকাল থেকে যা গেল আমার উপর এরপর খাওয়া কি গলা দিয়ে নামে নাকি।তবে আমি অনেক খেতে পারা একটা মেয়ে ।সারাদিনেই কিছু না কিছু খেতাম।সত্যি বলতে এ মুহুর্তে আমার পেটে খুব ক্ষুধা লেগেছে।তাই সামনে মুরগীর রোস্ট আর পোলাও টা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না।সামনে পেয়েই খেতে লাগলাম।গপ গপ করে খেতে লাগলাম।হঠাৎ করে খাবার গলায় বাজল আর হেচকি তুলতে লাগলাম।
কোন ভাবেই যেন হেচকি টা কমছিল না।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম উনি আমার সামনে এক গ্লাস পানি ধরল। আমি পানিটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেললাম।উনি আমাকে কি ভাবছে সেটা দেখার দরকার আমি মনে করছি না।এ মুহুর্তে আমার ক্ষুধা লেগেছে আর আমাকে এখন খেতে হবে এটাই জানি।তাই আমি আপন মনে খেতে লাগলাম।অল্পক্ষণের মধ্যেই আমার খাওয়া শেষ হল আর আমি রিলাক্স মোডে শুয়ে পড়লাম।আর উনি খাবার প্লেট টা টেবিলের উপর রাখতে গেলেন।যাক লোকটারে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ না এটা ভেবে মনটা শান্ত হল।
কিন্তু হুট করে উনি বললেন
-আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন নাকি?না ঘুমালে আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
আমি নড়ে চড়ে বসে বললাম
-নাহ আমি তো ঘুমায় নি, কেন কি বলবেন? বলুন।
উনি এবার গম্ভীর গলায় বললেন
-সত্যি বলতে সবার চাপে পড়ে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি।আমি আপনার বোন অর্পাকে প্রথম দেখায় খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম।ওকে নিয়েই একটা ছোট্র সংসার কল্পনা করে ফেলেছিলাম।সে জায়গায় আপনাকে কেন জানি না, চাইলেও মানতে পারছি না।আপনাকে আমি আঘাত দিয়ে কথাটা বলতে চাই নি তবে আমি খুব সোজা সাপটা স্বভাবের ছেলে যা বলি সরাসরি।না মানার ও একটা কারন আছে।আশা করি আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর সে কারনটা বুঝতে পেরেছেন।
উনার কথাগুলো শুনে কেন জানি না তেমন কোন খারাপ লাগল না।কারনটা আর কি হবে কারনটা তো এটাই হবে আপু সুন্দর আর আমি অসুন্দর।আমি তো আগেই বুঝেছিলাম আমার বিয়েটা আট দশটা মেয়ের মত হয় নি।তাই উনাকে জবাব দিলাম
-আপনাকে জোর করে আমাকে মানতে হবে না।আমি নিজেও চাই নি এভাবে আমার বিয়ে হোক।বিয়ের দিন সকালে অর্পা আপুকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।কোথায় গিয়েছে কেউ বলতে পারল না।আর আপুর কোন রিলেশন ছিল এটাও কারও জানা নেই।এ মুহুর্তে কি করবে কেউ বুঝতে পারছিল না।আর ঐ বাড়িতে আমি ছাড়া আর কোন মেয়ে বিবাহযোগ্য ছিল না।তাই সবার জোরাজোরিতে রাজি না হয়ে পারলাম না।আমি জানি অর্পা আপুর তুলনায় আমি কিছু না।অর্পা আপু অনেক সুন্দর আর আমি অসুন্দর।কিন্তু এটা নিয়ে আমার কখনও আফসোস হয় নি।আমি সবসময় নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।কিন্তু ভাগ্যের কাছে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি কখনও জোর করে কিছু করব না।সময়টা একটু পার হতে দিন আপনি চাইলে আমি নিজেই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।
আমার কথা গুলো শুনে উনি বেশ চমকে গেলেন।উনি হয়ত আশা করে নি আমি এমন কিছু বলব।কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে উনি উত্তর দিলেন
-সে যাইহোক সময়েই সব বলে দিবে।আপাদত আমি আপনাকে মেনে নিতে পারব না।আপনি এ বাড়িতে এসেছেন মেহমান হিসেবে আপনার যেন, কোন সমস্যা না হয় আমি সে বিষয় টা খেয়াল রাখব।কিন্তু দয়া করে আমার ভালোবাসা পাবার আশা রাখবেন না।কারন আমি আপনার বোনকে প্রথম দেখেই ভালেবেসে ফেলেছি।
আমি কিছুটা চুপ থেকে জাবাব দিলাম
-আপনি দয়া করে আমাকে সিরিয়ালের নায়িকা ভাববেন না।আমি আপনাকে জোর করব না এটা আমি বলেছি।কিন্তু আপনি আপনার স্ত্রী র সামনে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসি বলবেন সেটা আমি মেনে নিব না।আপাদত ডিভোর্সের আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী।সুতরাং সম্পর্ক টা ঐভাবেই দেখবেন।আর আমার সামনে অন্য নারীকে ভালোবাসার কথা বলার আগে দশবার ভেবে বলবেন।আমি দেখতে অসুন্দর হলেও নিজেকে কখনও ছোট করে দেখি নি।এখনও দেখব না।দয়াকরে আমাকে অবলা নারী ভেবে যা ইচ্ছা বলে যাবেন না।দোষটা তো আমার ছিল না।আমি তো আপনাকে জোর করে বিয়ে করতে চাই নি।ভাগ্য এভাবে সব উলট পালট করে দিয়েছি।কিন্তু ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের জীবন বরবাদ করার মত মেয়ে আমি না।
এবার আমি উনার দিকে একটু খেয়াল করলাম দেখলাম উনার মুখটা বেশ চুপসে গিয়েছে।গেলেই বা কি।আমি কেন উনার এসব কথা শুনে নিজেকে ছোট করব।এটা বাংলা সিনেমা না আর আমি বাংলা সিনেমার নায়িকা সাবানা ও না।সুতরাং যতদিন আমি অরন্যের বউ হিসেবে আছি, আমি আমার অধিকার আদায় করে নিব।তবে সেটা ভালোবাসা দিয়ে জোর করে না।উনি আমার কথা গুলো শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে জবাব দিলেন
-আমার মন যা চাই আমি তাই বলব আপনি না করার কে?আপনাকে সে অধিকার আমি দেই নি।নিজের অধিকারের বাইরে গিয়ে কথা বলবেন না বুঝছেন।দেখে তো মনে হচ্ছে ছেলে ফাসানের ব্যাপারে খুব চালু।
উনার এ কথাটা শুনার পর মাথায় একটু রাগ চড়ে গেল। তবুও নিজেকে শান্ত করে জবাব দিলাম
-আমি কি আপনাকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট দিতে বলেছি? অথবা আমার ব্যপারে মন্তব্য করার অধিকার দিয়েছি নাকি?আপনি যেহেতু আমার ব্যাপারে বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন আমিও আপনার ব্যপারে বলব।এটাকে বলে লেভেল করা বুঝছেন।আপনি যেমন আমাকে তেমনেই হতে হবে।
-দেখুন আপনি কিন্তু খুব বেশি বকবক করছেন।আপনাকে দেখে তো প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি খুব বোকাসোকা কথায় বলতে জানেন না।এখন তো মনে হচ্ছে আপনার মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ফুটছে।আমার সাথে লাগতে আসবেন না।
আমিও এবার শান্ত হয়ে জবাব দিলাম
-বকবক আপনি শুরু করেছেন।দেখতে অসুন্দর দেখে কি ভেবেছেন আমি অবলা নারী।সিরিয়ালের মত করে আপনাকে খাটে শুতে দিব আর আমি নীচে শুয়ে পড়ব।তা হবে না মশাই আমার পাশে এসে ঘুমান।
-আপনি তো বেশ ডেন্জারাস মেয়ে।আমি আপনার সাথে ঘুমাব কেন?
আমি ভ্রু টা বেশ কুচকে বললাম
-তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?
জাববে উনি বললেন
-পাশের রুমে ঘুমাব।
আমি হাসি দিয়ে বললাম
-তা হবে না মশাই।আপনি এখানেই ঘুমাবেন।
উনি আমার কথা শুনে বেশ অবাক হচ্ছে মনে হচ্ছে।অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললেন
-এই যে শুনেন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
-সে যাই করি আমি ঘুমালাম তবে রুম ছেড়ে ঘুমানো যাবে না।রুম ছেড়ে বের হলে আমিও কিন্তু আপনার সাথে চলে যাব।
উনি বেশ চমকিত, পুলকিত হয়ে আমাকে বললেন
-আপনি তো বেশ নাছোরবান্দা। ওকে রুম ছেড়ে যাব না।আমি নীচে ঘুমাচ্ছি।এবার আমায় একটু রেহাই দেন সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে "নীল ক্যাফের ডায়েরী " পেজে পাবেন।
আমিও মুচকি হেসে হেসে জবাব দিলাম
-ঠিক আছে ভূতমশাই।
উনি ভ্রূ টা কুচকে বলল
-ভূতমশাইটা কে আবার?
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-কেন আপনি?
উনি অবাক হয়ে বলল
-আপনি আমার নাম ও ঠিক করে ফেলেছেন এর মধ্যে?
-হ্যা করেছি।
উনি বিরক্ত হয়ে জাবাব দিলেন
-আপনি সত্যিই পাগল একটা মেয়ে।সেটা কি আপনি জানেন?
আমি আরও একটু হেসে নিলাম। হেসে জবাব দিলাম
-সেটা নতুন করে বলার কিছু না।আমি একটু নাছোরবান্দা সবাই জানে।আপনি ঘুমান।আর ধন্যবাদ এত কিছু খাওয়ানোর জন্য।সবগুলোই আমার প্রিয় খাবার ছিল শুধু চিনির পানিটা ছাড়া।
উনি কিছুটা চুপ হয়ে বলল
-দোহাই লাগে এবার চুপ হন আমাকে ঘুমাতে দিন একটু।
আমি হাত দুটো দিয়ে মুখ চেপে ইশারা করলাম ঘুমান।
(আপনারা হয়ত আমার এরকম আচরণ দেখে অবাক হচ্ছেন আমি এমন কেন করলাম।সত্যি বলতে আমি ছোট বেলা থেকেই খুব নাছোরবান্দা আর পাগলাটে স্বভাবের মেয়ে ছিলাম।পাগলামোর ভাব গুলো এত বড় হওয়ার পরও যায় নি।তাই পাগলামির সুযোগ পেলেই করে ফেলি।এই যে অরন্যের সাথে সবে মাত্র শুরু করেছি এরপর যে কত কি হবে কে জানে।আস্তে আস্তে সব বলব।)
যাইহোক সেদিনেের মত আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।পরদিন সকালে উঠে আমি খেয়াল করলাম উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।এমন ভাবে নাক ডাকছে মনে হচ্ছে চারদিকে ভূমিকম্প হচ্ছে।আমি কি করব বুঝতে না পেরে একটা....