হবু শালি যখন বউ পর্ব ১ - নিবর অনুভূতি

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪

হবু শালি যখন বউ পর্ব ১



আজকে আমার হবু দুলা ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।শুনতে খুব অবাক লাগলেও এটাই ঘটেছে আমার সাথে।আমার যার সাথে আজকে বিয়ে হতে যাচ্ছে তার সাথে আজকে আমার বড় বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

আমার বড় বোনের নাম অর্পা।ও আমার আপন বোন না তবে চাচাত বোন।আমাদের চাচাদের মধ্যে আমি আর অর্পা আপুই বড় আর বিবাহযোগ্য।অর্পা আপু আমার ২ বছরের বড়।দেখতে হুর পরীর মত সুন্দর।তার রূপের কাছে সবকিছু হার মানবে।আর অর্পা আপুর যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল তিনি শুধু অর্পা আপুকে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করতেছে।শুনেছি লোকটার নাকি মস্ত বড় ব্যাবস্যা আছে।ঐ লোকটার আর্থিক অবস্থার তুলনায় আমাদের আর্থিক অবস্থা এতটা মানানসই না।আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আর উনি অনেক বড় পরিবারের ছেলে।

আপুকে যেদিন উনি দেখতে এসেছিল আমি সেদিন জানালা দিয়ে হালকা উকি দিয়ে উনাকে দেখেছিলাম।সত্যিই লোকটা ও অনেক সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছিল।আর লোকটা আপুকে দেখে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলল।পছন্দ হওয়ার সাথে সাথে খুব হই হই,রই রই করে আপুর বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হল।আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম আপুর এত বড় ঘরে বিয়ে হবে দেখে।তাই সবাই খুব মজা করছিলাম।আমি নিজেও খুব মজা করতে লাগলাম।সামনের সপ্তাহে আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে।

(ওহ হো তোমাদের তো ঐ লোকটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল না।ঐ লোকটার নাম অরন্য, বয়স ২৮। বাবার বড় ব্যাবস্যা আছে আর সেটাই দেখাশোনা করছে।ঢাকায় অনেক গুলা বাড়ি আছে শুনেছি আর উনাদের টাকা পয়সার নাকি কোন অভাব নেই)

যেহুত সামনের সপ্তাহে অর্পা আপুর সাথে অরন্যের বিয়ে তাই আমি আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখলাম হলুদে কি করব, বিয়েতে কি পড়ব, বউ ভাতে কি করব।চিন্তা করেছিলাম আপুর বিয়েতে খুব মজা করব।কত প্ল্যান যে করেছিলাম সব প্ল্যান বিয়ের দিন সকালে মাটি হয়ে গেল।

কারন হঠাৎ করে বড় কাকী বলে উঠল

-কি গো অর্পার মা অর্পা তো ঘরে নেই।কোথাও খুঁজে তো পাচ্ছি না।

বড় কাকীর কথা শুনে আমরা সবাই থমকে গেলাম আর কিছুক্ষণ পর পাত্র আসবে আর এখন অর্পা আপুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।অর্পা আপু কোথায় গেল কেউ বুঝতে পারতেছিল না।কারন অর্পা আপুর কারও সাথে কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।থাকলে অবশ্যই কেউ না কেউ জানত।তবে আপু কোথায় গেল এ প্রশ্নটা যেন সবার মনে বিদ্ধ করতে লাগল।

অর্পা আপুকে সারা বাড়ি খুঁজা হল কিন্তু অর্পা আপুর কোন হদিশ মিলল না।সবাই ভেবে নিয়েছে অর্পা আপুর হয়ত প্রেমিক ছিল আর অর্পা আপু সে প্রমিকের হাত ধরে পালিয়েছে।কিন্তু এ কথা জানাজানি হলে আর মানসম্মান থাকবে না।তাই কি করবে সবাই বুঝতে পারছিল না।সবাই উপায় খুঁজতে লাগল।হঠাৎ করে কাকা বাবাকে বলে বসল

-অনন্যা তো বিবাহযোগ্য। অনন্যাকে বিয়ে দিলে কেমন হয়।মান সম্মান বাঁচানোর জন্য এছাড়া কোন উপায় নেই।

যেহেতু পাত্র যোগ্য ছিল আর আমি দেখতে এতটাও সুন্দর ছিলাম না।আর আমার মত দেখতে খারাপ মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো পাত্র আর হবে না।তাই আমার বাবাও কিছুটা লোভে পড়ে কাকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

বাবার এমন অন্যায় সম্মতি দেখে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।কারন আমি আর অর্পা আপু রাত আর দিন।আমি দেখতে এতটা ভালো না।তারা আমাকে মেনে নিবে বলে মনে হয় না।কিন্তু বাবা আর কাকার প্রচন্ড চাপে অর্পা আপুর জায়গায় আমাকে কনে সেজে বসতে হল বিয়ের পিড়িতে।

লাল টুকটুক শাড়ি, ভারী গহনা পড়ে আমি কনে সেজে বসে আছি।কিছুক্ষণের মধ্যেই বর পক্ষ আসবে।জানি না তারা এসে কি করবে।কি হবে এর পরিণতি।ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগল।কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।মাথাটা যেন ঘুরতে লাগল।তবুও নিজেকে সামলে স্থির হয়ে বসে রইলাম।হঠাৎ কানে বাজতে লাগল সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চিল্লাতে লাগল।

বরকে বরণ করা হল।পাত্র পক্ষের সবাই কনে দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করল।পাত্র পক্ষ এসে আমাকে দেখে কনে পাল্টানো হয়েছে বলে হৈ চৈ শুরু করে দিল।কিন্তু আমার বাবা আর কাকারা বলল কনে ঠিকেই আছে।পাত্র পক্ষকে চাপ দিল বিয়ে করার জন্য না হয় ঝামেলা হবে।পাত্র পক্ষ ও চাপের মুখে পড়ে আমাকে বিয়ে করিয়ে নিতে রাজি হল।

নানা ঝামেলা পার হয়ে আমার বিয়েটা সম্পন্ন হল।আজকে অর্পা আপুর জায়গায় অরন্যের বউ হল অনন্যা।জানি না তাদের মনে আমার প্রতি কোন ক্ষোভ জন্মে আছে কি না।জমলেই বা কি যা হবার তা তো হয়েছেই।আমি তো চাই নি এমন কিছু হোক।আমার তো অরন্য ভাইয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে কারন উনি এসেছিল হুর পরী বিয়ে করে নিতে কিন্তু বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা শ্যাওরা গাছের পেত্নী।নিজের জন্য ও বেশ খারাপ লাগছে কারন আমি তো চাই নি আমার বিয়েটা এভাবে জোর পূর্বক দেওয়া হোক।দেখতে খারাপ হলেও কখনও এটা নিয়ে আফসোস করে নি।নিজেকে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট করে তুলার চেষ্টা করেছি।বিয়ে নিয়ে তো আট দশটা মেয়ের মত আমার ও স্বপ্ন ছিল।আর আজকে চোখের সামনে আমার সব স্বপ্নগুলো ভেঙে গেল।নিজের অজান্তেই বুকের ভিতর টা হুহু করে উঠল আর চোখ দিয়ে বৃষ্টি জড়তে লাগল।

আশে পাশে তো সবাই বলাবলি করতে লাগল বাহ বাহ অনন্যার ভাগ্য তো অর্পা খুলে দিয়ে গিয়েছে।তা না হলে অনন্যা এমন ছেলে বিয়ে করতে পারত নাকি।এসব শুনে যেন মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।ভাগ্যের কাছে যে এভাবে হেরে যাব বুঝতে পারি নি।অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন হল।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এখন কনে বিদায় দেওয়ার পালা আমার বাবা আমাকে অরন্যের হাতে তুলে দিল।অরন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সময় অরন্যের দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না।লজ্জায় নীচের দিকে মুখ করে রাখলাম।মনের ভিতর শুধু এ মুহুর্তে একটা প্রশ্নই জাগছে অর্পা আপু কোথায় আছে।কোথায় গেল কার সাথে গেল।এসব ভেবে মনের ভিতরটা খুব আনচান করতে লাগল।

অরন্যের হাতে আমাকে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাকে যাওয়ার জন্য সবাই গাড়িতে তুলে দিল।হুম আমি বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।কিন্তু আট দশটা মেয়ের মত হাজার টা স্বপ্ন নিয়ে যাচ্ছি না হাজারটা স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছি।ভাগ্যের পরিহাস যে এমন হবে বুঝতে পারি নি।

ব্যাস্ত শহরের পথ পাড়িয়ে আমি শ্বশুর বাড়ি পৌঁছালাম।শ্বশুর বাড়ির বাকি সবাই আমাকে দেখে কানাকানি করতে লাগল এ কি সর্বনাশ করেছে অরন্য এক তো মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে করেছে তার উপর অসুন্দর মেয়ে। মেয়ে দেখার সময় সবার কি চোখ কপালে ছিল নাকি।অরন্যের সাথে এ মেয়েকে মানায় নাকি।এমন সর্বনাশ অরন্য নিজের হাতে কেন করল।

এসব কথা শুনে মনটা আরও ভাঙ্গতে লাগল।কোন রকমে সবাই আমায় তুলে ঘরে নিল।খেয়াল করলাম ঘরটা ভীষণ সাজানো গুছানো।চারদিকে অনেক ফুলের সুভাস ছড়াচ্ছে। আজকে এ ঘরে অর্পা আপুর আসার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের লিলাখেলায় এ ঘরে আমি আসলাম।

ঘরের নিভু নিভু আলোতে চুপ করে বসে রইলাম।হয়ত অন্যসব মেয়েরা এসময় বসে থাকে স্বামীর অপেক্ষায় আর আমি বসে আছি এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর অপেক্ষায়।বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করলাম অরন্য রুমে ঢুকেছে।

উনাকে দেখে আমার সারা শরীর ভয়ে কাঁপছিল।জানি না কি কথার সম্মুখীন আমাকে আবার হতে হবে।এসব ভেবে যেন ভয়ে আরও কুকরে যেতে লাগলাম।খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ করে...