প্রিন্সিপাল ম্যাডাম যখন বউ পর্ব ১
১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কলেজে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবেন এই এলাকা এমপি মহোদয়। এই প্রোগ্রামে আমি উপস্থাপকে দায়িত্ব পাই। কলেজে টপার হিসেবে আমার নামডাক আছে, তাই স্যার-ম্যামরা একটু বেশি পছন্দ করে, তার জন্য এত বড় দায়িত্ব পেলাম।
এত বড় প্রোগ্রাম হ্যান্ডেল করতে পারবো কিনা ভাবতে ভাবতেই রাতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি ৮টা বাজে। তড়িঘরি করে ফ্রেশ হয়ে সাদা পাজামা আর লাল পাঞ্জাবী পড়ে রেডি হয়ে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
কলেজে গেইটে ডুকতেই দেখি প্রিন্সিপাল ম্যাম স্টেইজের সামনে দাঁড়িয়ে। ম্যাম নীল শাড়ি, কালো ব্লাউজ, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিয়েছেন, সাথে উনার স্ট্রেইট করা চুলগুলো খুলে রেখেছেন। ম্যামকে এভাবে দেখে সালামের কথা ভুলেই হা করে তাকিয়ে আছি। আগে অনেকবার ম্যামকে দেখলেও ম্যামের সৌন্দর্য্য এভাবে চোখে পড়েনি।
হঠাৎ করে আমার প্রিয় কামাল স্যারের ধাক্কায় আমার ঘোর কাটলো। স্যার বলতে লাগলো হা করে ঐদিকে কি দেখছো? আমি কথাটা ঘুরিয়ে বললাম স্যার স্টেইজ সাজানে অনেক সুন্দর হয়েছে তাই চোখ ফেরাতে পারছি না। স্যার তখন বললো তাড়াতাড়ি আসো কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রোগ্রাম শুরু হবে। তখন স্যার আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো, দেখলাম ঐখানে সকল স্যার-ম্যাম এবং যারা উপস্থাপক সকলে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিন্সিপাল ম্যাম রুমে প্রবেশ করলেন। ম্যামকে দেখে আমার মনে আবার সেই ঢেউ শুরু হয়ে গেলো। ম্যাম এবার বলতে শুরু করলো, তোমরা আজ ভালোভাবে অনুষ্ঠানটা শেষ করবে, যথেষ্ট আপ্যায়ন করবে এমপি মহোদয়দের। কারণ উনার কাছে আমরা আরেকটা বিল্ডিং নির্মাণে প্রস্তাব দিবো, উনি খুশি হলেই হবে। এরপর প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেলো। এমপি মহোদয় আসলো, তিনি আশ্বাস দিলেন আরেকটি বিল্ডিং নির্মাণ করে দিবেন। খুব ভালোভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হলো। অনুষ্ঠানের মাঝখানে আমি প্রিন্সিপাল ম্যামের সাথে কয়েকটা ছবিও নিয়েছি। আসলে আজকে অনুষ্ঠান তাই সবাই সবার সাথে ছবি নিচ্ছিলো।
অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরে আসতে আসতে রাত ৮টা বেজে গেলো। বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলাম, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসতেছে না, শুধু ম্যাডামের মুখটাই চোখে ভাসছে! মোবাইলটা অন করে ম্যামের সাথে তোলা ছবিগুলা দেখে নিলাম। ছবিগুলা দেখার পর আমার মন শান্ত হওয়ার পরিবর্তে আরো অশান্ত হয়ে গেলো। তাই ফেসবুকে লগিন করলাম, ভাবলাম ম্যামের নামটা সার্চ দিয়ে দেখি কোনো ফেসবুক একাউন্ট পাওয়া যায় কিনা। অবাক হয়ে দেখি এই নামে একটা আইডি আছে আর তাতে ম্যামের আজকে তোলা পিক দেওয়া। তড়িঘরি করে রিকুয়েস্ট পাঠালাম। কিন্তু এক্সেপ্ট করছে না দেখে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আরে আপনাদের তো আমার পরিচয়টাই দেওয়া হলো না। আমি আজহার, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, তাই যখন যা চাই তা পাই, আদরের কোনো কমতি নেই।
ক্লাসে প্রবেশ করে ব্যাগ রাখতেই, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আফজাল কাকু বললেন প্রিন্সিপাল ম্যাম ডাকছে। প্রিন্সিপাল ম্যামের রুমে সালাম দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখি প্রোগ্রাম যারা হ্যান্ডেল করেছিলো তারা সবাই। ম্যামের দিকে তাকাতেই আবার ক্রাশ খেলাম। ম্যাম আজ সাজেনি তবুও ম্যামের সৌন্দর্য্যের কমতি নেই। ম্যাম সকলে ধন্যবাদ দিলেন, এবং আজলে লাঞ্চ কলেজেই করতে বললেন। এরপর একে একে সবাই বের হওয়ার পর আমি ম্যামকে বললাম, আজকে সাজলেন না যে ম্যাম? ম্যাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন আমাকে সাজতে হয় নাকি! আমিও একটু লজ্জা পেয়ে চলে আসলাম।
রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করতেছি, এমন সময় মনে পড়লো দেখি ম্যাম রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছে কি না। ম্যামের আইডিতে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলাম, আমার আইডি দিয়ে রিকুয়েস্ট পাঠানো নেই। ভাবতে লাগলাম তার মানে কি কাল রাতে আমি অন্য আইডি রিকুয়েস্ট পাঠাইছি, যেটা দিয়ে আমি লেখালেখি করি! তখন ঐ আইডি গিয়ে দেখি ম্যাম আমার রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করছে। ঐ আইডিটা আমি ভিন্ন নাম ও অন্য কারো পিক দিয়ে ব্যবহার করি, আর গল্প লিখি।
হঠাৎ ভাবতে লাগলাম ম্যাডামের উপর আমি দূর্বল কেনো হয়ে যাচ্ছি। উনি আমার থকে অনেক সিনিয়র, আর ম্যাম-ছাত্র কেমন দেখায়, সমাজ কি বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে অনেক খারাপ লাগলো।। পরোক্ষণে ভাবলাম ভালোবাসা বয়স ম্যাটার করে না, ছাত্রী-শিক্ষকে প্রেম হতে পারলে, ছাত্র-ম্যামে কি দোষ করলো? কিন্তু ম্যাম তো আমাকে মেনে নিবে না। তাই ফেইক পরিচয়েই ম্যামের সাথে প্রেম করার সিদ্ধান্ত নিলাম। তাই ম্যামকে হাই লিখে ম্যাসেজ করলাম কিন্তু কোনো আন্সার দিলেন না। আমিও ভাবলাম হয়তো তিনি দিবেন না, মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে কলেজ গেলাম। প্রিন্সিপাল ম্যামের রুমের দিকে উকি দিলাম, কিন্তু তিনি নাকি আজকে আসেন নাই। মন খারাপ করেই বাকি ক্লাসগুলো না করে টিফিনের সময় বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ফেসবুকে একটু ঢু দিলাম। দেখি ম্যাম রিপ্লাই দিয়েছে-
:- হ্যালো, আমি অপরিচিত কারো রিপ্লাই দেই না, কিন্তু আপনার গল্পগুলো ভালো লাগলো, তাই দিলাম।
ম্যামের রিপ্লাই দেখে আমার মনটা নেচে উঠলো, ম্যামের মনে আমার জন্য একটু ভালোলাগা তৈরি হলো।
রাতে ম্যামকে আবার ম্যাসেজ দিলাম-
আমিঃ আপনার নাম কি? (আমি জেনেও একটু অপরিচিতি হওয়ার ভান ধরছি)
ম্যামঃ সুমাইয়া।
আমিঃ কি করেন? এখনো স্টাডি?
ম্যামঃ না, একটা কলেজে প্রিন্সিপাল। আপনি?
আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকার মধ্যে পড়ে গেলাম কি বলবো এখন! ভাবতে ভাবতে বলে দিলাম-
-আমি নাটক/মুভির স্ক্রিপ্ট রাইটার।
যেহেতু লিখালিখি করি, তাই ম্যাম এটা অবশ্যই বিশ্বাস করবে। এরকম প্রতিদিনই আমাদের টুকিটাকি কথা হতো।